লকডাইন! বাড়ছিল নাবালিকার বিয়ে! প্রশাসনের উদ্যোগে কান্দি মহকুমায় ৫০ জন নাবালিকার বিয়ে রোধ
প্রশাসনের সহযোগিতায় বন্ধ হচ্ছে নাবালিকার বিয়ে তবুও থাকছে উদ্বেগ
রঙ্গিলা খাতুন, কান্দি
আর্থিক অনটনই হোক বা শিক্ষা সচেতনতার অভাব। বাল্যবিবাহের ঘটনা কিন্তু আড়ালে আবডালে ঘটেই চলেছে। লকডাইনের ফলে বন্ধ স্কুল কলেজ বাড়িতে একাকীত্ব হতাশা তৈরি হয়েছিল পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের মধ্যে তাতে বাল্যবিবাহ প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তবে পুলিশ প্রশাসন, ব্লক প্রশাসন এবং বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উদ্যোগে কান্দি মহকুমায় বাল্যবিবাহ অনেকটাই রোধ করা গেছে।
সম্প্রতি কান্দি মহকুমায় বিভিন্ন এলাকায় নাবালিকার বিয়ের বন্ধ করার বিশেষ উদ্যোগ দেখা গেছে প্রশাসন এবং তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনির। কান্দি মহকুমার অন্তর্গত ভরতপুর, সালার, বড়ঞা, খড়গ্রাম এবং কান্দি ব্লকে লকডাইনের পর থেকে অর্থাৎ দুবছরে মোট ৫০ জন নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে। তন্মধ্যে কান্দি ব্লকে ১০ জন, বড়ঞা ১৪ জন, খড়গ্রাম ১১ জন, ভরতপুর দুটি ব্লকে ১৫ জন নাবালিকার বিয়ে রোধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কেউ নবম, কেউ দশম শ্রেণির ছাত্রী।
১৮ বছর না হলে পরিবারের কন্যাদের বিয়ে নয় রাজ্যে সরকারের উদ্যোগে কন্যাশ্রী চালু হলেও এখনও গ্রামীণ এলাকায় বাল্য বিবাহ চলছে। এ বিষয়ে কান্দি বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন " বাল্যবিবাহ বিবাহ থেকে শুরু করে মেয়েদের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য গত বছর থেকে প্রতিটি ব্লক অঞ্চলে শিশু সংসদ গঠন করা হয়েছে। তাতে বাল্যবিবাহ অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হয়েছে। "
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলার বিভিন্ন জায়গায়। আমরা খোঁজ পাচ্ছি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসন ব্লক প্রশাসন কে সাথে নিয়েই আমরা নাবালিকার বিয়ে রদ করতে সচেষ্ট হচ্ছি। বিগত দুই বছরে মোট ২৫৬ জনের বিয়ে আটকানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ভরতপুর ব্লকের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনির ওবজারভার দিব্যেন্দু পাল জানান, "মুর্শিদাবাদ জেলাতে ইতিমধ্যেই একাধিক নাবালিকার বিয়ে রদ করা হয়েছে। ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেওয়া হলে বাড়ির কন্যা দের যা সমস্যা হয় তা বোঝানো হয়েছে পরিবার কে। ইতি মধ্যেই আমরা একাধিক শিবির করেছি, তবুও অনেক অংশেই গ্রামীণ এলাকায় মানুষ সচেতন নয়। ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমরা যখনই খবর পাচ্ছি সেই বিয়ে রদ করা হচ্ছে প্রশাসনিক সহযোগিতা নিয়ে।"
রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য বলছে, নাবালিকা বিয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যে প্রথম মুর্শিদাবাদ। এই জেলার ৩৭.৯% নাবালিকা ১৮ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই শ্বশুরবাড়ির পথে রওনা হয়। যথারীতি মাতৃত্বের হারও বেশি এঁদের মধ্যে। সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন অফ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের একটি তথ্যে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে নবান্নের। কমিশনের তথ্য মাফিক, লকডাউনের জেরে কর্মহীন পরিবারগুলিতে নাবালিকার বিয়ে কিছুটা হলেও বেড়েছে। অন্তত ৫০০ নাবালিকার বিয়ে হয়েছে এই কারণে।